ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শিবির

নিউজ ডেস্ক ::
মিয়ানমারে থাকাকালীন বিভিন্ন বিরোধের জের ধরে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেছে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। এছাড়া প্রত্যাবাসনের জন্য স’ানীয় প্রশাসনের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে আরসা ও আল ইয়াকিনের মতো মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চক্ষুশূল হয়েছে নিরীহ রোহিঙ্গারা। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ দিন দিন অসি’র হয়ে উঠছে। বাড়ছে সহিংসতা। যে কারণে স’ানীয়দের মাঝে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ।
গতকাল বুধবার সকালে কুতুপালং ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করে আরসা ও আল ইয়াকিনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের লোকজন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, রাতের বেলায় অস্ত্রধারী ১০/১২ জন রোহিঙ্গা প্রায় সময় ক্যাম্পের অলিতে গলিতে মহড়া দিতে দেখা যায়। তাদের ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে থাকে। তারা মাঝে মধ্যে ক্যাম্পে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ভীতিকর পরিসি’তির সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যে অনেকেই চেনা জানা থাকলেও নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানান। লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি খালেদ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে মাঝি কথা বলছেন। তাকে ডেকে অনতিদূরে গিয়ে জানতে চাওয়া হলো, এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে কিছু জানেন কি না? জবাবে মাঝি জানান, ক্যাম্পে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই বলা সম্ভব নয়। যেহেতু সত্য কথা বললেই তাকে অপহরণ বা হত্যা করা হচ্ছে। তিনি একটি কথাই বললেন ক্যাম্পের অবস’া ভাল নয়। পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যতদ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন হয়ে গেলে বেঁচে যাই।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সেক্রেটারি মো. নুর জানায়, বর্তমানে ক্যাম্পের বিভিন্ন স’ানে অবস’ান নিয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের নামে কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা। এরা আরসা নাকি আল ইয়াকিন জানতে চাওয়া হলে ওই রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, এদের কোন সংগঠন নেই। এরা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বললে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
কুতুপালং ইই ব্লকের বাসিন্দা ছেনওয়ারা বেগম (২২) জানায়, রোববার রাত ১০টার দিকে ১০/১২জন মুখোশধারী সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তার ভাই ওই ব্লকের মাঝি সাইফ উল্লাহ (৫৫) ও আরেক ভাই শওকত উল্লাহ (৩০)কে হাত-পা বেঁধে টেনেহিঁচড়ে বালুখালী ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যায়। এসময় চিৎকার দিয়ে ডাকাডাকি করলেও কোন রোহিঙ্গা এগিয়ে আসেনি। তিনি জানান মিয়ানমারে থাকতে তারা আরসা বা আল ইয়াকিনের সদস্যদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। সেই থেকে সন্ত্রাসীরা এ পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাকসুদ আলম জানান, অপহরণের বিষয়টি জানার পরে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। তবে পরিবার ও কোন এনজিও’র পক্ষ থেকে অভিযোগ না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস’া নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে লম্বাশিয়া ক্যাম্পে মাঝি মমতাজ মিয়াকে (৩৫) ছুরিকাঘাত করে হত্যা, থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. ইউসূফকে (৪০) গুলি করে মেরে ফেলা, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প মসজিদের মোয়াজ্জিম ইউসূফ আলীকে (৫৫) পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সমস্ত অপরাধের সাথে জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্যাম্পে অসি’রতা দিন দিন বাড়ছে বলে রোহিঙ্গারা স্বীকার করলেও এসব ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে মুখতে কেউ রাজি নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, এক সাথে বেশি রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে ক্যাম্পে অসি’রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৎমধ্যে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স’াপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যাতে ভোটার আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন এবং পাসপোর্ট বানাতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে রোহিঙ্গা যাতে সুবিধা নিতে না পারে জন্য কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন উপজেলাভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় থেকে অনলাইনে কোন প্রকার জন্ম সনদ ও মৃত্যু সনদ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে এখন সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। ওইসব সন্ত্রাসীর কাছে সাধারণ রোহিঙ্গারাও নিরাপদ নয়। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তিনি এখানে একটি স’ায়ী থানা স’াপনের দাবি জানান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত নিরাপদে রাখা এবং আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাসহ যাবতীয় বিষয় মনিটর করতে প্রশাসন ক্যাডারের ২০ জন কর্মকর্তা ও প্রতি ব্যাটালিয়নে ৭৫০ জন করে দুই ব্যাটালিয়নে এক হাজার ৫০০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নিয়োজিত থাকবে।

পাঠকের মতামত: